জীবনে চলার ক্ষেত্রে শিষ্ঠাচারের ভূমিকা অসীম। তেমনি কর্মক্ষেত্রেও কিছু শিষ্ঠাচার অবশ্যই মেনে চলতে হয়। কমক্ষেত্র বিভিন্ন রকম হতে পারে, কিন্তু কিছু বেসিক প্রাতিষ্ঠানিক শিষ্ঠাচার মুটামুটি সব দেশেই এক। (অবশ্যই আপনি যদি ভিন্ন দেশের লোকের সাথে ব্যবসা করেন তবে তাদের দেশের রীতিনীতি অনুযায়ীই তা করতে হবে। যেমনঃ চায়নাতে দুহাতের বদলে এত হাত দিয়ে ভিজিটিং কার্ড নিলে চাইনিজরা সেটাকে অভদ্র আচরন হিসেবে গন্য করে)
১) মিটিংয়ে বসে অযথা নড়াচড়া করবেন নাঃ টেবিলে তুড়ি মারা, আঙ্গুল ফোটানো, ঘাড় ফুটানো, আড়মোড়া ভাঙ্গা, হাত-পা নাড়ানো বা ঝাকাঁনো - এসব করা যাবে না। এসব করলে তার মানে হচ্ছে, আপনি হয় নার্ভাস অথবা মিটিংয়ে বসতে বিরক্তবোধ করছেন। এমন কিছু করবেন না যাতে করে মনে করা হয় যে মিটিংয়ে আপনাকে আমন্ত্রন জানানোটাই ভুল হয়েছে।
২) ফোন অফ রাখুনঃ মিটিংয়ের মাঝে ফোন বেজে উঠলে অনেকেই বিরক্ত হন। এমনকি ভাইব্রেশনের আওয়াজ হলেও অনেকে বিরক্ত হন। তাই মিটিং শুরু করার আগে ফোন অবশ্যই সাইলেন্ট করে রাখবেন।
ছবি: সংগৃহীত
৩) নিজের খাবার খানঃ অন্যেরটা নয়। আসলে এই সমস্যাটা প্রতিটি প্রাদেশিক জাগাতেই দেখা যায়। একদম ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে বড় বড় কোর্পরেট অফিসও। যদি না কেউ আপনাকে তার খাবার সাধে, আপনি কখনই অন্যের খাবার খেতে যাবেন না।
৪) আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন কি বলবেনঃ “উমমম”, “আআআ” এই জাতীয় শব্দগুলো কথার মাঝে খুব বেশী করার মানে হচ্ছে, আপনি যেটা নিয়ে কথা বলছেন, সে ব্যাপারে আপনার খুব বেশী ধারনা নেই। তাই বানিয়ে বানিয়ে বলার চেষ্টা করছেন এবং অযথাই সময় ক্ষেপণ করছেন। এমনটা করবেন না। এই জাতীয় তোতলানোর কোন সুযোগ কর্মক্ষেত্রে নেই।
ছবি: সংগৃহীত
৫) বিল শোধ করুনঃ যদি আপনি কারো সাথে রেস্তোরায়ঁ মিটিংয়ের এপয়েনমেন্ট সেট করেন, তবে তার পুরো বিল পরিশোধ করাটা আপনার দায়িত্বের ভেতরেই পড়ে। আংশিক কিংবা পুরো বিল অতিথির ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করবেন না।
৬) অন্যদের জায়গাকে সন্মান করুনঃ অফিসের কিউবিকেলসগুলো কিন্তু শব্দ বা গন্ধ বাধা দেয় না। তাই নিজের ডেস্কে কাজ করার সময় ফোনে নিচুস্বরে কথা বলুন। এবং নিজের ডেস্কে খাবার খাওয়া থেকে যথাসমম্ভব বিরত থাকুন। কারন আপনার কথা স্বরে বা খাবারের ঘ্রানে আপনার পাশের ডেস্কের কলিগ বিরক্তবোধ করতে পারেন।
ছবি: সংগৃহীত
৭) পরিচ্ছন্ন থাকুনঃ ঘামের গন্ধ, নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। নিয়মিত ডিওডোরেন্ট, মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। দাতঁ ব্রাশ করে, গোসল করে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পড়ে সুগন্ধি মেখে অফিসে যান।
৮) ভ্রমনের প্রস্তাব করুনঃ বাইরের শহর বা দেশ থেকে কোন অতিথি (বায়ার কিংবা ক্লায়েন্ট) আসলে তাকে আপনার শহরটি ঘুরিয়ে দেখার প্রস্তাব করুন। এটা হতে পারে একটা ছোট্ট গাড়ি ভ্রমন অথবা ঘন্টাখানেক রেস্তোরায়ঁ একত্রে বসা। এতে করে আপনাকে এবং আপনার কোম্পানিকে অধিক বন্ধুভাবাপন্ন মনে হবে।
৯) লেট লতিফ হবেন নাঃ অফিসে কখনো দেরীতে পৌছঁবেন না। ট্রাফিক জ্যাম বা ঘুম থেকে উঠতে দেরী হবার কারনে অফিসে লেট হতেই পারে, কিন্তু এটা কোন অজুহাত হতে পারে না। মাসে কয়েক দিন কয়েক মিনিট লেট করে অফিসে পৌছঁলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না; কিন্তু এটাকে কিছুতেই অভ্যাসে পরিনত হতে দেবেন না। কারন এই বদভ্যাস আপনাকে চাকরিচ্যুত করবার জন্য যথেষ্ঠ হতে পারে ।
ছবি: সংগৃহীত
১০) আন্তরিকভাবে হ্যান্ডশেইক করুনঃ কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষ হ্যান্ডশেইকের মাধ্যমে ফার্ষ্ট ইমপ্রেশন দেয়। তাই হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন, হ্যান্ডশেইক যেন সংক্ষিপ্ত ও শক্ত হয়। এটা আপনাকে করে তুলবে আত্নবিশ্বাসী ও প্রানবন্ত।
১১) অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত কথা বলবেন নাঃ যখন কোন মিটিংয়ে কথা বলবেন, অফিসিয়াল বিষয়ের বাইরে, বিশেষ করে ব্যক্তিগত বিষয়ে কোন কথা বলবেন না। যেমনঃ আপনার গতবারের ছুটিটা কেমন কাটালেন, আপনার পোষা কুকুরটি কেমন আচরন করে, অথবা আপনার পরিবারের কে কেমন? এসব বিষয়ে যদি একান্তই কথা বলতে চান তো লাঞ্চব্রেকে বলতে পারেন।
১২) অন্যদের উপাধি জানুনঃ যদি কারো সম্বোধনের ব্যাপারে দ্বিধান্তিত থাকেন, তবে একটু খোজঁ খবর করুন। এক্ষেত্রে LinkedIn বেশ কাজে দিতে পারে। নতুবা একজন ডাক্তারকে মিষ্টার বলে সম্বোধন করা কোন কাজের কথা নয়।
১৩) কর্মক্ষেত্রের বাইরেও পেশাদার থাকুনঃ হ্যাঁ, এমনকি অফিসের হলিডে পার্টিতেও। আপনার ব্যক্তিগত জীবন আপনার কোম্পানিকেও প্রতিনিধিত্ব করবে। কাজের বাইরেও কখনো এমনকি কিছু করা আপনার উচিত হবে না যেটার কারনে আপনার কোম্পানির সুনার ক্ষুন্ন হয়।
১৪) পোষাক সঠিকভাবে পরিধান করুনঃ ঠিকঠাকমতো পোষাক পরাও পেশাদারিত্বের ভেতর পড়ে। যেখানে যখন যেভাবে পোষাক পরে যাবার দরকার, ঠিক সেভাবেই পড়ে যান।
ছবি: সংগৃহীত
১৫) কর্মক্ষেত্রের সীমানাকে সন্মান করুনঃ আপনার বস আপনার বন্ধু হতেই পারে, এটা চমৎকার একটা ব্যাপার। কিন্তু এটাকে খুব বেশী দূর নিয়ে যাবেন না। সীমার ভেতর থাকাটা পেশাদারিত্ব। বন্ধুসুলভ থাকা আর প্রাধিকারমূলক আচরন আশা করা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আপনি যদি একই ব্যক্তির সাথেও থাকেন, তবু কর্মক্ষেত্রের সম্পর্ককে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না। দুটোকে আলাদা রাখুন।